Ads

শুক্রবার, ২ মার্চ, ২০১৮

পরিচিত কবি-লেখক দেখলে দৌড়ে পালাই-বিষাদ আব্দুল্লাহ


১.
এ শহর আমাকে স্বাবলম্বী করতে পারে নি। এর মূলে যেমন আমার ব্যর্থতা তেমনি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতাও সম্পূর্ণরুপে দায়ী। ২০০৮ সালে বাবার হাত ধরে ঢাকায় আসি। এ শহরে পড়বো বলে। ২০০৯ সালে এসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি তিতুমীর কলেজে এসে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে ভর্তি হয়। গতবছর থেকে ঢাকার বিখ্যাত সাতটি কলেজ ঢাবির নিয়ন্ত্রণাধীন, ফলে তিতুমীর কলেজও ঢাবির নিয়ন্ত্রণে। ঢাবির অধিভুক্ত হওয়ার শুরুতেই মাস্টার্স পরীক্ষা, এখন সদ্য পূর্ণ বেকার। এখনও অব্দি বাবাই আমার ভরণ-পোষণের দায়িত্বে। ফলে আমি সভ্য সমাজ আর সভ্য রাষ্ট্রের বোঝা। ২০০৯ সাল থেকে প্রাণের মেলা বইমেলাতে আসা যাওয়া শুরু। তখন শাহবাগের সৃষ্টিশীল মানুষদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে ধীরে ধীরে পরিচিত হচ্ছি। সে থেকে মিশে গেলাম গ্রহ শাহবাগে। নতুন মুখ কত শত চিন্তার মানুষজন। তন্মধ্যে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের দিকে এসে সাহিত্যের পত্রিকা ‘কবিতার রাজপথ’ এর সাথে জড়িয়ে গেলাম। রাজপথ থেকেই শুরু এ পত্রিকার সাথে পথচলা। কবি সৈয়দ শামসুল হকের আহব্বানে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কবিবন্ধন সমাবেশে যোগ দিতে গিয়েই ‘কবিতার রাজপথ’ এর সাথে সাক্ষাৎ অতঃপর পথচলা। যে সৃজনকর্মী মানুষটি এ পত্রিকাটি করেন তার সাথে প্রথম পরিচয় ঘটে অনুপ্রাণন পত্রিকা অফিসে। সেই থেকে চিনি, বোধহয়, তারপর ফেসবুকে বন্ধুত্ব এবং তীব্র ঘনিষ্ঠতা।
২.
এ শহর আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে গিলছে রোজ, আর ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যাচ্ছি। মা-বাবা-বোন-ভাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ফ্যাল ফ্যাল করে,তীব্র আলসেমি, বাউণ্ডুলেপনা, উদাসীনতা, প্রতিষ্ঠান বিরোধী মনোভাবের কারণে চাকুরিতে অনীহার দরুন সৃষ্ট কষ্ট ভোগ করেই চলেছে মা-বাবা। রোজই মিথ্যা আশ্বাস দিয়েই চলেছি, কুল কিনারা আর ঘটে নি। শাহবাগের আসা-যাওয়ার শুরু থেকেই প্রচণ্ড অর্থ দৈন্যতার ফলে বই কিনতে না পারার যন্ত্রণার প্রতিটি বিষমাখা তীরের ফলায় নিজেকে বিদ্ধ করেছি। এমনও হয়েছে বই অথবা সাহিত্যের পত্রিকা কেনার পর একটা সিংগারা খেয়ে বাসায় ফিরেছি হেঁটে হেঁটে। পকেটে হাত বুলিয়ে দেখতাম কোন টাকা পাওয়া যায় কি না, বই কিনবো বলে। টাকার কারণে ভালো কোন ঋদ্ধ-সমৃদ্ধ বই কিনতে পারতাম না, এখনও পারি না। মনকে বিভিন্নভাবে আশ্বস্ত করতাম, আচ্ছা, আরেক দিন এসে কিনে নিয়ে যাবো, সে দিন আর কোনদিন আসে নি। প্রতিবছর যখন বইমেলা আসে তখন নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য সাবধানে পা ফেলি, পরিচিত লেখক-বন্ধু দেখলেই লুকিয়ে চলি দেখা না দেখার ভান ধরি। এড়িয়ে চলি। সামনে পড়বো বলে বিকল্প পথও ব্যবহার করেছি। দেখা হলে কিনবো বলে আজও মিথ্যা আশ্বাস দিয়েই চলেছি। কথা ঘুরিয়ে অন্যপ্রসঙ্গ চলে যাওয়ার চেষ্টা করি।
৩.
২০১৮ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা সদ্য পরিসমাপ্তি ঘটলো। প্রতিবারের মতো এবারও লুকিয়ে থেকে বাঁচার চেষ্টা করেছি। পরিচিত কবি লেখক বন্ধুদের সাথে দেখা হলে সে আগের মত আশ্বাস নতুবা বলতে হয়েছে: বইমেলার শেষের দিকে তথা ২৮ তারিখে দিকে বেছে বেছে কিনি আরও কয়েকজনের বই কিনবো এরুপ সান্তনাসূচক বাক্যই ব্যবহার করেছি। বইমেলার মাঝের দিকে বন্ধু কবি শহিদুল লিটনকে বলে রেখেছিলাম যে, ৫০০ টাকা ধার দিস, বই কিনবো। লিটন বলেছিল: বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, পেলে দিবে। মেলার ২৮ তারিখে তাকে জিজ্ঞেস করলে লিটন বললো তার পকেটে ১০০ টাকা আছে। ‘কয়লা’ নামক একটা ছোটকাগজ বের করার ইচ্ছা থাকলেও টাকার কারণে বোধহয় বের করতে পারে নি। ফেব্রুয়ারির ২৭ তারিখে মেলা শেষ করে প্রতিদিনকার মতো শাহবাগ মোড়ের পূবালী ব্যাংকের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম আমি আর মুনির ভাই (কবি মনির ইউসুফ) পরে জাকি সুমন ভাই আর আব্দুর রহিম রানা এসে যোগ দেয়, সিকতা কাজল আপুও ছিল। মনির ভাইকে সেই সময় বলাতে ওনি বললেন: আমাকে আগে বলো নি কেনো। বললাম: এমনিতে তো আপনি পকেট খরচের টাকা দ্যান, তার উপর যদি বলি যদি আপনি বোকা দেন। তারপর মনির ভাইয়ের পরিচিত বড় ভাই যিনি কবিতা লিখেন, বোধহয় উত্তরায় থাকে । মনির ভাই তার কাছে আমার জন্য ৫০০ টাকা চেয়ে বসেন, আমারই সামনে। তিনি দিতে রাজি হলেও আমি তৎক্ষণাত বলে ওঠি : না না না আমার লাগবে না। অনেক জোরাজোরি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। টাকাটি আর নেয় নি। বইমেলা চলাকালীন ‘কবিতার রাজপথ’ পত্রিকার নতুন সংখ্যার কাজ চলছিল। ফলে মধ্যখানে সাতদিন বাড়িতে থেকে ফিরে ফের লেগে পড়ি ‘কবিতার রাজপথ’ বের করার জন্য। নানা জটিলতা, বিজ্ঞাপন সংকটের কারণে নতুন সংখ্যাটি আর আসলো না বইমেলায়। যাইহোক, ২৮ তারিখে ২ টার দিকে বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবে যাই, শারীরিক অসুস্থতা ও অনীহার কারণে আর পত্রিকার কাজ না করে মনির ভাই আর আমি বইমেলার দিকে যাই। মনির ভাইকে টাকার জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছি কিন্তু ফলপ্রসূ কিছু ঘটে নি। মনির ভাইও নানা দিক থেকে আর্থিক চাপে আছে জেনেও আমি মনির ভাইয়ের কাছে বায়না ধরছিলাম। তিনি পারলে অবশ্যই দিতেন, কোন  সন্দেহ নাই। মনির ভাইকে কনকর্ডের সামনে বলেছিলাম যে আমার মা আমার জেঠাতো ভাই মারফৎ টাকা পাঠাচ্ছে সে গাড়িতে আছে তিনি বললেন নিশ্চিত হলে আমি দিবো। যাইহোক, কনকর্ড থেকে আমি আর মনির ভাই বাই-ারখানা থেকে মুফীদ আল- আলম অনূদিত ‘রুবাইয়াতে ওমর খৈয়াম’ ১০ কপি নিয়ে রিকশা করে বইমেলার দিকে চলে আসি। এসে ‘কবিতার রাজপথ’ স্টলে বুকভরা যন্ত্রণা নিয়ে বসে আছি তো আছি।
৪.
ডাচ ব্যাংক পরিচালিত মোবাইল ব্যাংকিং রকেট-এ হঠাৎ আমার মোবাইলে ৩০০ টাকা আসে। আমি তো বিস্ময়ে মাতোয়ারা। কে পাঠালো ! মনির ভাইতো আমার রকেট একাউন্ট জানে না ! তাহলে কে পাঠালো ! আমার পরিবারের সদস্য ছাড়া তো কিংবা দুয়েকজন আত্মীয় স্বজন ছাড়া অন্যরা জানার কথা না ! অপেক্ষায় বসে থাকলাম। দেখি কেউ ফোন করে কিনা, আধ ঘন্টা হতে চললো কেউই ফোন করে না। অবশেষে বইমেলা থেকে পায়ে হেঁটে ছুটলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি মার্কেটের দিকে টাকা উত্তোলনের জন্য। ভাংতি টাকার অজুহাতে এই মার্কেটের কেউই ৩০০ টাকা উত্তোলন করতে রাজি হলো না। পরে ঐ মার্কেটের একজন বললেন আজিজ মার্কেটের দিকে চলে যান, এবার ছুটলাম আজিজের দিকে একের পর এক টাকা উত্তোলনে ব্যর্থ হতে চলেছি। এজেন্টওয়ালাদের বারবার বলা সত্ত্বেও তারা টাকাটা তুলতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখালো না। অবশেষে, আজিজ মার্কেটস্থ পাঠক সামবেশের পাশে একটি দোকান থেকে ২৯০ টাকা উত্তোলন করি। দুইটা পুরি আর চা এবং সিগারেট পান করে রিকশা যোগে মেলার দিকে ফের ছুটলাম। ঐদিক থেকে অপেক্ষা করছে প্রিয় বন্ধু লেখিকা আফিফি ঈশিতা এবং তার স্বামী রিয়াদ। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ঢুকেই যখন ঘটনাটি ঈশিতা বললাম, তখন ঈশিতা হেসে কুটিকুটি। তাকে অনর্গল পাগলের মতো বলতে শুরু করলাম কি কি বই কিনবো, রেবতী বর্মণের ‘সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ’, আবিদ আনোয়ারের ‘ছন্দের সহজ পাঠ’। অবশেষে তিনজনে ঘুরতে ঘুরতে জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী থেকে প্রথমেই ডিসকাউন্ডসহ ৯০ টাকা দিয়ে ‘সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ কিনি, তারপর আগামী প্রকাশনীতে গিয়ে দেখি আবিদ আনোয়ারের ‘ছন্দের সহজ পাঠ’ বইটির দাম ডিসকাউন্টসহ ২০৩ টাকা আসে। বইটি আমার ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে গেল। আফিফি অবশ্য আমার কাছে যা আছে বাকিটা সে দিবে বলে রাজি হলেও আমি আর আগ্রহ দেখায় নি। ওদের সাথে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে চললাম বাংলা একাডেমির দিকে, ৮০ টাকা দিয়ে ক্রয় করি তরুণ কবি ও অনুবাদক অরণ্য আপন অনূদিত লিও টলটস্টয়ের ‘হোয়ার লাভ ইজ, দেয়ার গড ইজ অলসো, ৫০ টাকা দিয়ে ক্রয় করি কবি জিয়াবুল ইমনের কবিতাগ্রন্থ ‘ত্বকী অথবা তিনজন ক্রসফায়ার’ । টাকা সংকট পড়াতে বন্ধু কবি ও গবেষক বঙ্গরাখালের কাছে যাই একশো টাকা ধার নিতে। সে দিলো তবে মেলা চলাকালীন ফেরত দিতে হবে এই আশ্বাসে, কারণ সে ছোটকাগজ ‘চর্যাপদ’ এর স্টলে একমাসের জন্য বিক্রয়কর্মী হিসেবে ছিল, তার হিসাব জমা দিতে হবে যেহেতু মেলা শেষ।আমি বললাম: দিবো, মনির ভাই আসলে, ওনার কাছ থেকে নেয় দিবো। ফলে ১০০ টাকা তার কাছ থেকে নিয়ে সাহিত্যের ছোট কাগজ ‘বিরাঙ’ পত্রিকার সম্পাদক আলী এহসানের ‘মাটির দিনলিপি’ বইটি নিলাম ৫০ টাকা দিয়ে। বাকি ৫০ টাকা তাৎক্ষণিক ফেরত দিয়ে আসলাম বঙ্গকে।

৫.
‘কবিতার রাজপথ’ স্টলে গিয়ে বসলে একজন পাঠক একটি বই ক্রয় করে বইটির মূল্য লেখা নেই বোধহয় এটা ক্রোড়পত্র হবে। ১৫০ টাকায় বিক্রি করি। পরে পাঠকটি বিকাশ থেকে টাকা তুলে বইটি নিয়ে যায়, তখন মনির ভাই ছিল স্টলে। বইটি পাঠকটি নিয়েছে কি না জানতে চাইলে মনির ভাই বললো: নিয়েছে। বললাম: টাকা-টা দেন ভাই, বই কিনবো। মনির ভাই অস্বস্তিতে পরে গেলেন, তিনি বলেন এই মুহূর্তে আমার টাকা দরকার, বলতে বলতে ৫০০ টাকা বের করে বলেন : টাকাটা ভাংতি করে বাকি টাকা দিও। ওনার মুখের অস্বস্তির ছাপ ভীষণ মনে দাগ কাটে, আমি বঙ্গ’র বাকি ৫০ টাকা ফিরিয়ে দিয়ে বাকি ৪৫০ টাকা মনির ভাইকে ফিরিয়ে দিয়ে বললাম: কিনবো না। ওনি রেগে গিয়ে বললেন: কাল থেকে আমার সাথে আর কোন কথা বলবে না। দু’জনই মন খারাপ করে চুপচাপ স্টলে বসে আছি। আমি মুখে হাত দিয়ে, মনির ভাই স্টলের সামনের দিকে তাকিয়ে। আমার পকেটে খুচরো যা ছিল তা দিয়ে বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পের ৫০ পারসেন্ট ডিসকাউন্টে দেওয়ান মিজানের ‘অভিন্ন ভ্রুণে কবিতা ও চিত্রকলা’ বইটি ৩০ টাকা দিয়ে নিলাম। তারপর বইমেলার শেষ পরিসমাপ্তি টেনে  একটা ডার্বি সিগারেট ধরালাম টিএসসিতে এসে।পরে মনির ভাইসহ ফের শাহবাগ মোড়ে পূবালী ব্যাংকের সামনে, যেখানে আমরা আড্ডার বেশির ভাগ সময় কাটাই। যাইহোক, আমার শরীর ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে। এদিকে জেঠাতো ভাই ৫০০ টাকা নিয়ে আসবে সেই প্রতীক্ষায় বসে রইলাম। মনির ভাই জিজ্ঞেস করলো: পকেট খরচ লাগবে নাহ!। বললাম: লাগবে না। ফলে বিদায় নিয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় চলে আসি। এদিক থেকে ৫০০ টাকার আর দেখা পেলাম না, লুঙ্গিও পেলাম না। বাসায় এসে দেখি রুমমেটরা বাজার করে নি। জেঠাতো ভাই রাসেলের প্রতি প্রচ- ক্রোধ ও ক্ষোভে মন বিষিয়ে আছে। ভাগ্যিস বাসায় ওঠার আগে বাকিতে রুটি আর চা খেয়ে উঠেছিলাম। সারারাত ক্ষুধায় আর শরীর ব্যথায় কাটলো, সকালে প্রচণ্ড শরীর (পয়লা মার্চ) ব্যথা নিয়ে ১১ টার দিকে মা ১০০০ টাকা বিকাশে পাঠালে নাস্তা  করি পেটভরে, ডাক্তারও দেখাই, দুপুরের শেষের দিকে বাবা রকেট-এ ৫০০ টাকা পাঠায়। পয়লা মার্চ রাতে তো প্রচ- শরীর ব্যথা আর জ্বরে ছটফট করেছি। আজ ২ মার্চ কিছুটা ভালো লাগছে।

৬.
তাহলে ৩০০ টাকা কে পাঠালো ! ৩০০ টাকার কারণে এবারের বইমেলাতে যে আমি বই কিনতে পারলাম! মা, মেলাতে (২৮ তারিখে) ফোন করে জিজ্ঞেস করলো: রাসেলের সাথে দেখা হয়েছে কি না, আমি ক্ষোভ ঝেড়ে বললাম, না। তারপর স্বল্পক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলে মা আবার ফোন করে জিজ্ঞেস করলো: তোর বাবা টাকা পাঠিয়েছে, পেয়েছিস কি না। আমি তো চক্ষু চড়ক গাছ ! মাকে বললাম, পেয়েছি, বাবা আমাকে জানাবে নাহ! আমি তো ভাবলাম কে না কে পাঠালো ! বললো: তোর বাবা ব্যস্ত ছিলো। ফোন করতে পারে নি। আমার বিস্ময়ের ঘোর আর কাটে না। এটা কি করে সম্ভব ! বাবা কি আমার বই না কিনতে পারার আর্তনাদ শুনতে পেয়েছেন! এরকম টা তো বাবা কোনদিন করেছে বলে তো মনেপড়ে না, সোজা কথা করে নি। এরকম দুয়েকবার হয়েছে বাবা যখন তাড়াতাড়ি বেতন পেয়ে যায় তখন আমি না চাইবার আগে ফোন করে বাসা-ভাড়া বাবত টাকা পাঠিয়েছে কিন্তু মাসের শেষে ফোন না করে কোনদিন তো টাকায় পাঠায় নি ! টাকা পাঠাবার আগে তো নিশ্চয় ফোন করে। তাও আবার এই সময়ে ! তাও আবার ৩০০ টাকা! এটা কি করে সম্ভব ! আমি তো মেলাতে বই কিনবো বলে বাবার কাছে টাকাও চায় নি, তাহলে কি করে সম্ভব হলো! কি করে সম্ভব ! আজও ভেবে তার কোন কুল কিনারা বের করতে পারি নি। মা আর বোনকে ঐদিন রাতে মিথ্যা বলেছিলাম, মাকে বলেছিলাম: এই টাকা দিয়ে শিক্ষক নিবন্ধনের বই কিনবো, বোনকে বললাম: শিক্ষক নিবন্ধনের বই কিনে পকেটে ১ টাকা নিয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় আসি। সত্য হলো, ১ টাকা নিয়ে বাসায় ফিরেছি এ পর্যন্ত ঠিক বাকিটা মিথ্যা। ২৮ তারিখে জেঠাতো ভাই রাসেল তার মেজু বোন জামাই সৌদি আরব যাবে এজন্য ওনাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সাথে যাচ্ছে তথা ঢাকায় আসছে। তীব্র জ্যাম এবং বিমানের ফ্লাইট মিস হওয়ার ভয়ে আমার সাথে আর দেখা করা হয়ে ওঠে নি রাসেলের, পরদিন জানলাম সাথে জ্যাঠা ও রাসেলের মেজু বোনের মেয়ে তথা ভাগ্নি হিমু ছিল। ফলে, রাসেলের কাছে আমার পকেট খরচের জন্য কিছু টাকা পাঠাবার জন্য মাকে ফোন করে বলেছিলাম, সঙ্গে করে বাড়িতে ভুলক্রমে রেখে আসা আমার লুঙ্গিটাও যেনো নিয়ে আসে। মা তার কাছে আমার জন্য ৫০০ টাকা ও  লুঙ্গিটা পাঠায়। যাইহোক, সে টাকা- তো পেলাম না, বাড়িতে গেলে লুঙ্গিটার দেখা পাবো। আমার এই যে তালিজোড়া জীবন, কবে নতুন পোষাকে রাঙাবে ! এই  পা দুটি কবে হাঁটতে হাঁটতে স্বচ্ছলতার দেখা পাবে ?  জানি না.......!! 

প্রকাশকাল: ০২.০৩.২০১৮, ঢাকা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন