আলোকায়নের যুগে এখন আর বিস্ময়কর বলতে কিছু নেই। সবই স্বাভাবিক, মানুষের সম্পর্কগুলোকে মায়ারবৃত্তের ভিতরে বৃত্তাকারে আটকানো সম্ভব নয়। একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাই, বিংশ শতাব্দীর নব্বই দশকের গ্রামীণ তরুণ-তরুণীদের প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমগুলোতে একটা ভায়ার থাকতো এই যেমন পিয়ন হিসেবে আমিও ছিলাম, চিঠি দেওয়া-নেওয়ার বিনিময়ে ছিলো বকশিস, অথবা কোনকিছু দেওয়ার লোভ । যতই না করতো খুলিস না, চিঠি কিন্তু আমি খুলে পড়তাম আবার চিঠিটি পূর্বাবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে কি না সেটা অতটুকু বয়সে মাথায় আসতো না । এসব প্রণয় নির্মিত সম্পর্কগুলোতে আবেগের সাঁকো ছিলো, যে সাঁকো ভয়ানক গোপনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠতো, নির্জন কোন জায়গায়, ঝোঁপের পাশে, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পূর্বমুহূর্তে, হালকা অন্ধকারে, গোধূলি বেলায় কোন আত্মীয়ের বাচ্চাকে কোলে নেওয়ার অজুহাতে দেখা করার কারুময় প্ল্যান, কি যে টান টান উত্তেজনা, দেখা করার আনন্দে ভীষণ কিউট হালকা কান্নার চাপ ভেসে ওঠতে দেখা যেতো দুজনের মুখাবয়বে, বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকতো সে সব চিঠি। হাতের লেখায় চিঠির অক্ষরগুলো দুজনের বুকের ভিতরে কি পরিমাণ দাগ কেটে যেতো বর্তমানে বেড়ে ওঠা প্রজন্ম কতোটুকু বুঝে ওঠবে? অথবা অনুভব করবে?
একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক প্রায় শেষ হতে চলেছে। প্রথম দশকের শুরু থেকেই সম্পর্কগুলো ক্রমান্বয়ে খোলস পাল্টাতে শুরু করলো, ক্রমশ সম্পর্কগুলো ফ্যাকাসে হতে চললো, মানবিক প্রেমের তীব্র সংকট পরিলক্ষিত। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে চিঠি? বড্ড হাসি পাবে এই প্রজন্মের মুখে মুখে। এখন সম্পর্কগুলো বড় শরীরময়। এক শ্রেণির প্রেমিকপুরুষ গড়ে ওঠেছে যাদের কাজ ভান ধরা প্রেমের ফাঁদে ফেলে বয়সে কম তরুণীদের ধর্ষণ করা। তাহলে এসব ধর্ষক প্রেমিকদের চেনার কি উপায়? যে একই সাথে অনেক মেয়েদের শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে শরীরসহ সবকিছু লুটেপুটে নিচ্ছে। এই কথাটি একশ্রেণির নারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অথচ সেই নব্বই দশকে কি ছিলো? অদ্ভুত এক বিষাক্ত শব্দ এই প্রজন্ম ব্যবহার করে তাহলো 'ব্রেকআপ'। সম্পর্ক গড়তে যত সোজা ভাঙতে জাস্ট এই শব্দটা ব্যবহার করলেই খতম। প্রেমের সম্পর্ক ভাঙে কি করে? সম্পর্কের বড়জোর ফাটল দেখা যেতে পারে। এটা তো বিয়ে নয় যে তোমার সাথে বনিবনা হচ্ছে না ব্যাস! ডিভোর্স। ব্যাপারটা তো তা নয়!
এখনকার সম্পর্ক সমুদ্রের বালুর মত অথচ হওয়া উচিত সমুদ্রের মত। এইদিন খুব বেশিদূরে নয়, মানুষের সাথে রোবটের আর কোন পার্থক্য থাকবে না। বরং রোবটই মানুষের চেয়ে অনেক বেশি মানবিক হয়ে ওঠবে...!
০৪.০৪.২০১৮, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন