গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে |
এই শহরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তুখোড় স্বপ্নবাজ বন্ধুরা আর কেউ নেই বললেই চলে । ২০০৯-২০১৮ এ সময়টা জুড়ে আমরা এক সাথে পায়ে পায়ে হেঁটেছি, গান ধরেছি, উল্লাসে কেঁপেছি, মিছিলে নেমেছি, তিতুমীর কলেজের মাঠে কার্ড খেলেছি, সিঁড়িতে, মহাখালী ওয়ারলেস, ব্যাংক এশিয়ার সামনে চায়ের দোকানে, বটতলা, ব্রাক ইউনিভার্সিটির সামনে, গুলশান-হাতিরঝিল লেকে কত শত হাজার গল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, সেইসব গল্পগুলো এখন পুরো শহরময় জুড়ে প্রতিটি ছাত্রের ভিতর ঘুরছে।
অনার্সের পর সর্বপ্রথম রাজেল হুট করে চাকরি নিয়ে ময়মনসিংহ চলে গেল যা অবিশ্বাস্য লেগেছে কারণ তার পুরো ভাবনাজুড়ে একটা সরকারি চাকরির চেষ্টা, সবাইকে ছেড়ে বলা যেতে পারে হঠাৎ করে এই শহর থেকে নীরবে চলে গেল রাজেল। রাজেলের বাসাটা ছিলো আমাদের আস্তানা, হৈইচৈই করার আঁতুড়ঘর। সম্প্রতি রাজেল বিয়ে করেছে, নতুন সংসার নিয়ে সে ভালোই আছে।
সুজন তার বাবার অসুস্থ্যতার (আংকেল এখন আর আমাদের মাঝে নাই, নিশ্চয় তিনি ওপারে ভালো আছেন) বদৌলতে চাঁদপুর চলে গেল।
শান্তও কাউকে না জানিয়ে এই শহর হুট করে ছেড়ে দিল, পরে জানতে পারি কোন একটা কারণে তাকে বাড়িতে থাকতে হচ্ছে।
শুভ এই শহরে লড়তে চেয়েছিল, সে পারি নি এটা বলব না, সে এখন বরিশাল। নিজ উদ্যেগে কিছু করতে চায়।
জুয়েল এখনো একটা সরকারি চাকরি আশায় প্রাণপনে লড়ে যাচ্ছে, মামার বাসা ছেড়ে এখন গাজীপুর থাকে।
সজল ঢাকার উত্তরার স্থানীয় বাসিন্দা হলেও চাকরিসূত্রে এখন নারায়ণগঞ্জ থাকে।
তুহিন টঙ্গীর স্থানীয় বাসিন্দা, উত্তরায় চাকরি করে। ভালোই আছে সে।
![]() |
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে |
হ্যাঁ, বন্ধুদের মধ্যে এখনো অব্দি একমাত্র সফল মানুষ হিসেবে বলা যেতে পারে সিদ্দিককে। তার জীবন সংগ্রামের কাহিনী প্রতিটি পিছিয়ে পড়া মানুষদের অনুপ্রেরণা দিবে, এখনো অব্দি সিদ্দিকই একমাত্র যে সরকারি চাকুরি পেয়েছে, পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর হয়ে এখন রাজশাহীর সার্দায় ট্রেনিংয়ে আছে।
মাহবুব সরকারি চাকুরির আশায় আশায়, এখন চাকরির সুবাদে ফরিদপুর আছে।
ফারুক ছাত্রজীবন থেকে একটা স্কুলে শিক্ষকতা করে, এখন এর পাশাপাশি সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে।
লিটন ছাত্রজীবন থেকে টিউশনি করায় এখন এর পাশাপাশি সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে।
মিন্টু সদ্য বিয়ে করেছে, যতটুকু জানি টিউশনি করায়, সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে।
আমাদের সব বন্ধুদের মধ্যে একজনই বান্ধবী ছিল, চাঁদনী। কোন এক অভিমানে তার সাথে আর কথা হয় না, শুনেছি অনার্সের পর চাকরি নিয়েছে, নিশ্চয় সে ভালোই আছে।
সম্ভবত ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে, সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্রী মিতুলের সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয় হয়। সে আমার ডিপার্টমেন্টে পড়ে। তাকে ভীষণ রকম ভালোবাসতাম। মানে ব্লাইন্ড লাভ। সবসময় মনের ভিতরে যেভাবে আমার প্রেমিকাকে ভাবতাম, অনেকটা সেরকমই ছিল, ভালো আবৃত্তি করতো, কলেজের তুখোড় মেধাবী ছাত্রী, কবিতাও লিখে,বাঁধন নামে স্বেচ্ছা রক্তদান সংগঠনের সাথে যুক্ত, সংস্কৃতিমনা। গত মার্চের ১৯ তারিখে তাকে প্রেম প্রস্তাব দেওয়ার পর, কিছু না বলে, আমাকে না জানিয়ে গত এপ্রিলের ১৯ তারিখে বিয়ে করে ফেলল, এই কষ্ট আমার আজন্ম সাথী। যেন ট্রমার মধে ঢুকে গেছিলাম, যাইহোক চারপাশের প্রিয়জনদের সহযোগিতায় এখন ভালোই আছি। মিতুল নামেও এই শহরে আর আমার কেউ নেই।
আমিই একমাত্র যে আমারই সুনির্দিষ্ট কোন স্বপ্ন ছিল না, বহুস্বপ্নে মাতাল হয়ে শহরের অলিতেগলিতে ঘুরে বেড়ানোটাই ছিল আমার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। অথচ আমিও তো কোন না কোন স্বপ্ন নিয়ে এই ঢাকা শহরে এসেছিলাম। এখন পেটের তাগিদে আমিও আজ ঢাকা ছাড়ছি....
বিষাদ আব্দুল্লাহ
১৬.০৬. ২০১৯
![]() |
অনার্স চতুর্থ বর্ষের পর |
বন্ধুদের সাথে ইফতার পার্টির পরে তোলা |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন