Ads

বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২০

খানত্রয়ের বৃত্তের বাহিরের খান



কোন সন্দেহ নেই ইরফান খান একজন ভারতীয় তুখোড় প্রতিভাবান অভিনেতা, অভিনয় সম্রাট। পত্রিকা-ইন্টারনেট গেটে যা পেলাম, অভিনয় জীবনের শুরুতে তিনি থিয়েটার ও সিরিয়াল করেছেন। তারপরে প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়েছেন সেলুলয়েডের পর্দায়। একজন মার্জিত সুঅভিনেতা হিসেবে উপমহাদেশের গন্ডি ছাড়িয়ে সমগ্র বিশ্বের সিনেমাপ্রেমী মানুষের কাছে পরিচিতি গড়ে ওঠে, হয়ে ওঠে নায়ক। আমার মনেহয়, ইরফানই প্রথম কোন ভারতীয় অভিনেতা, যে কিনা হলিউড দুুিনয়ার সেলুলয়েড মাতিয়েছে, তারপর হয়তো অনেকেই এসেছে হলিউডে যেমন, দীপিকা পাড়–কোন, টাবু, প্রিয়াংকা চোপড়াসহ আরও অনেকে। তিনি এমনই একজন অভিনেতা, পর্দা আর পর্দার বাহিরে একই রকমের মনেহয়। ছিল আকৃষ্টময় ও মোহাচ্ছন্ন করে রাখার মতন ব্যক্তিত্ব, এবং স্বল্পভাষীও বটে।

কেউ যদি ইরফানের সিনেমা একবার দেখে, তাঁর সাবলীল, সহজাত অভিনয় ও মোহাচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব যে কারোরই হৃদয়ের মণিকোঠায় জায়গায় করে নিবে, এতে কোন নিঃসন্দেহ নাই। ইরফানের অভিনয় সর্বপ্রথম আমার নজরে আসে শাহরুখ খানের সহ-অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করা ‘বিল্লু বারবার’ সিনেমার মধ্যদিয়ে। সেই থেকে ইরফান খান পছন্দের একজন অভিনেতা হিসেবে মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নেয়। ২০১৮ সালে ওনার অসুস্থতা খবর শোনে ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে যখন সুস্থতার দিকে যাচ্ছিল এবং ফের সিনেমার শুটিং করছিল তখন সত্যি একজন বিজেতা বীরের মত দেখাচ্ছিল ইরফানকে। অবশেষে ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে তিনি চলে গেলেন অন্য দুনিয়ায়। তাঁর অভিনীত ‘লাইফ অব পাই’ ‘হিন্দি মিডিয়াম’ সিনেমাগুলো দেখে ইরফানকে আরও বেশি সিনেমার স্বজন মনে হতে লাগল। এবং খুবই সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আংরেজি মিডিয়াম’ সিনেমাটিও দর্শক-সমালোচকসহ সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে, মুগ্ধ করেছে সকলকে ইরফানের অনবদ্য অভিনয়।
  
যে তিনখানের বলয়ে বলিউড আবদ্ধ, তিনি ছিলেন সেই তিনখানদের বৃত্তের বাহিরের একেবারে ব্যতিক্রম ও রুচিশীল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন অভিনেতা। যার ফলে, ইরফান খানকে দেখা গিয়েছে বৈচিত্র্য রকমের গল্পে অভিনয় করতে। শেক্সপিয়রের গল্প অবলম্বনে সিনেমা করেছেন ‘মুকবুল’। বলিউড-হলিউড ছাড়াও ইরফান খান বাংলা সিনেমায় অভিনয় করে বাংলাদেশি দর্শক সিনেমাপ্রেমীদের মধ্য নতুন করে নতুন রুপে হাজির হয়ে মুগ্ধ করে রাখে। মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী পরিচালনায় ‘ডুব’ সিনেমাটি ছিল ইরফানের প্রথম বাংলা ও বাংলাদেশি একমাত্র সিনেমা এবং এই সিনেমাটির সহপ্রযোজক হিসেবেও তিনি ছিলেন। ১৯৬৭ সালে জন্ম নেওয়া এই মিষ্টি হাসির ইরফান খানের জীবনাবসান ঘটলো গতকাল ২৯ এপ্রিল ২০২০ সালে। মহান এ অভিনেতার প্রয়াণে রইলো আমার বিনম্র  শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। উল্লেখ্য, ইরফানের মৃত্যুর তিন আগে তিনি হারিয়েছেন তাঁর ৯৫ বছর বয়সী মাকে। এই মমতাময়ী মা’র প্রতিও রইলো আমার বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

একনজরে ইরফান খান:

জন্ম: ৭ জানুয়ারি ১৯৬৭ সালে ভারতের রাজস্থানের জয়পুরে। 

মৃত্যু: মুম্বাইয়ে ২৯ এপ্রিল ২০২০ সালে।

পুরস্কার: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার ও সর্বচ্চো বেসামরিক পুরস্কার ‘পদ্মশ্রী’ লাভ করেছেন।

উল্লেখযোগ্য সিনেমা:
মুকবুল, সালাম বোম্বে, দ্য দার্জিলিং লিমিটেড, জুরাসিক ওয়ার্ল্ড, দি অ্যামেজিং স্পাইডার ম্যান, রোগ, নেমসেক, লাইফ ইন আ মেট্রো, স্লামডগ মিলিনিয়ার. লাইফ অব পাই, পান সিং তোমার, সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টার রিটার্নস, দ্য লাঞ্চবক্স, পিকু, মাদারি, হিন্দি মিডিয়াম, বিল্লু বারবার, ব্ল্যাকমেইল, আংরেজি মিডিয়াম, কারিব কারিব সিঙ্গল। 

(লেখাটি তৈরিতে করতে সহযোগিতা নিয়েছি উইকিপিডিয়া ও পত্রিকা’র)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন