Ads

শুক্রবার, ১১ জুন, ২০২১

আমি চাই আমার কবিতা জনপ্রিয় না হোক

আমি চাই আমার কবিতা জনপ্রিয় না হোক, কিংবা জীবদ্দশায় পাঠকপ্রিয়তা পাক। আমি চাই পাঠক পড়ুক, কিন্তু জনপ্রিয় না করে তুলুক। হালের জবানায়জনপ্রিয়শব্দটির নতুন একটি ইংরেজি শব্দ এসেছে নামভাইরাল ভাইরাল হওয়া চাই না। চাই পাঠক পড়ুক, ভাবুক। আর কিছু না। চাই জীবদ্দশায় কেউ পুরস্কৃত না করুক। এসব কি খুব দরকার! আসলে আমার কি লেখক হবার কথা ছিল? আমার তা মনে হয় না। কেনই বা আমি লেখক হতে চাইবো! কি দরকার ছিল! এক বাবা ছাড়া আর চৌদ্দরগোষ্ঠীর কাউকেই তো দেখিনি কবিতা ভালোবাসে, উপন্যাস পড়ে, নাচে গায়। তাহলে শুরুটা বোধহয় আমার অতি ইমোশনাল মাইণ্ড আর বাবার সাহিত্য-সঙ্গীতপ্রীতির মোহ থেকে।

 এসব থেকে নাকি! হতেও পারে!

নারীর প্রতি ভালোবাসায় কি লেখক হওয়ার দিকে টেনে নিলো! আমার বিশ্বাস, যে আমি এখনো লেখক হয়ে উঠতে পারিনি। লেখক হয়ে উঠার কোন সিঁড়ি আজও জানা নেই। ভবিষ্যতেও সিঁড়ি  খোঁজে পাব না ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত। একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করলাম, আমার কোনকালেই মনে হয়নি যে আমি লেখক। সম্ভবত এজন্য লিখতে পারছি। যেদিন মনে হবে সেদিন থেকে হয়তো আর লিখতেও পারব না। মৃত হয়ে থাকবো।

চারপাশের বন্ধু-আত্মীয় পরিজন এদের সিংহভাগই প্রবাস জীবনে গিয়ে প্রচুর ভুঁইফোড় পয়সার মালিক। কেউ দেশে থেকেও সফল। অথচ আমার তীব্র মোহ জন্মাল না কেন! নাকি লেখার প্রতি দ্বায়বদ্ধতা থেকে! নাকি মানুষের প্রতি দ্বায়বদ্ধতা থেকে! নাকি সমাজের-রাষ্ট্র-পৃথিবীর প্রতি দ্বায়বদ্ধতা থেকে! আমি জানি আমার যে কর্মক্ষমতা। তাতে প্রচুর পয়সা কামানো সম্ভব। তবুও কেন যাই না! কেনইবা যেতে মন চায় না! মন চায় না তা কিন্তু একেবারে সত্যও নয়। চায় মন চায় মাঝে মাঝে। ভয় জাগে যদি লেখা থেকে দূরে সরে যাই। আমার তো কথা বলার একটাই জায়গা। একমাত্র লিখলেই তো নিজেকে হালকা লাগে, বেঁচে যাই। লিখে প্রাণ শক্তি ফিরে পাই। টাকা যা একেবারে অসম্ভব। দমবন্ধ হওয়া থেকে বাঁচি।

লেখাটা মূলত আমার কাছে জার্নির মত। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিনে যাওয়ার মত। ঘুরতে গেলে যেমন সতেজ লাগে। লিখলেই একমাত্র সতেজতা ফিরে পাই। কিন্তু পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে দায়িত্ব তো এসে যায়। দায় এড়াই কি করে। টাকাও তো দরকার। ভয় লাগে যদি অধিক টাকার মোহে অন্ধ হয়ে যাই। যদি মানুষকে ভুলে যাই। যায় তো অন্তত আমার চারপাশের পরিবেশ তাই বলে। এমন অনেককেই দেখেছি, অনেকবড় নীতিবাক্য আউড়ায়ে এখন টাকার আরামে ঘুমান। সবসময় এটা ভাবি, প্রভুদের মত নয় মানুষ হিসেবে সময়ের সাথে তালমিলিয়ে চলার মত টাকা আমার দরকার। তাতেই খুশি। অর্থবিত্ত, ভুঁইফোঁড় দরকার নাই। আমি মানুষের কাতারে থাকতে চাই। নিজের কথা বলতে চাই। মানুষের কথা বলতে চাই। আমি মানুষ হয়ে উঠতে চাই। 

তাহলে আমার লেখা জনপ্রিয় হোক চাই না কেন

চাই না এজন্য, জনপ্রিয়তা কিংবা প্রশংসাবাক্য, পাঠকপ্রিয়তা কোনটাই লেখার জন্য জরুরি না, মুর্খ্য না। আমার এসবের দরকার হবে কেন! স্বীকৃতির জন্য কি লিখতে এসেছি নাকি! লিখি তো নিজেকে প্রচণ্ড দমবন্ধ, মরে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাবার জন্য। লিখলেই তবে আমি বেঁচে যাই। স্বীকৃতি দিয়ে কি হবে! মরণের পর কেউ যদি মনে নাও রাখে তাতেও কোন বিন্দুমাত্র আফসোস থাকবে না। প্রচুর হাসতে চাই, প্রচুর বাঁচতে চাই। বাঁচার সাথে সাতে জনপ্রিয়তা হলে ক্ষতি কি

ক্ষতি কি নেই ! আছে। জনপ্রিয়তা একটা ভয়। একটা আতঙ্ক। আতঙ্ক একবার পেয়ে গেলে আর লিখা সম্ভব হবে কিনা জানি না! না লিখলে আমার বাঁচার সম্ভাবনা কম। প্রকৃত কথা হলো, না লিখলে আমি মরে যাব, আর যদি জনপ্রিয়তা বা পাঠকপ্রিয়তার কারণে লেখা বন্ধ হয়ে যায়! তাহলে বিষাদ আব্দুল্লাহ মৃত। বেঁচে থাকাটাই আমার ধর্ম। আয়ুষ্কাল অবধি, মৃত্যু আসার আগে কেন মরবো আমি!

 

বিষাদ আব্দুল্লাহ   

১১.০৬.২০২১, মাইজদি 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন