Ads

বুধবার, ১০ নভেম্বর, ২০২১

বেঁচে থাকা নামক মার্বেল

বিষাদ আব্দুল্লাহ

চোখ না দেখলেই বোধহয় ভালো হত, বেঁচে যেতাম। অনুভূতিশূন্য হলে বোধহয় প্রশান্তি নেমে আসত শরীরে। কেন বেঁচে আছি কিংবা কেনইবা বেঁচে থাকব। বেঁচে থাকা কেন জরুরি! চারদিকে মানুষ আছে, গাড়ির শব্দে মুখর মফস্বলের শহর, পরিচিতজন, আওয়াজটুকু কান অব্দি শুধু পৌঁছাচ্ছে না।

বারবার মনেহয়, মরে যাই, মরে যাই। ভীরু যারা পৃথিবীতে সব, তাদের কি শুধু মরতে ইচ্ছে করে!
তাদের কি আমার মত একলা লাগে! প্রখর নিঃসঙ্গ মনেহয়! এত মানুষ কেবল কথা শুনার, এবং সে কথাগুলো বিশ্বাস করার কেউ নেই ! পুরোনো দিনের কথা মনেপড়ে, ঢাকার জীবন। কথা শুনার লোক ছিল সেখানে, একদল মানুষপ্রিয় দল ছিল। যাদের কারো কারো পকেটশুন্য তবু কেবলি মুখে হাসি। প্রচুর হাসতাম, অনেক বেশি, হাসতে হাসতে বুকের ভিতর শীতেলা রাতের শেষ সময়ে নেমে আসা শীতের অনুভূতি আমাদের বুকজুড়ে নেমে আসত। রাত তছনছ করে ধরা দিত কবিতা।
তখন আমার কেবলি লিখতে ইচ্ছে করে। কেবল বাঁচতে ইচ্ছে করে। প্রেম ছিল না, বোউ ছিল না, সন্তান ছিল না। ছিল সব বন্ধু যাদের অনেকেরই পকেটশুন্য টাকা অথচ মনভর্তি কবিতারা ফুলে থাকত। সাহিত্য মহারথীদের নিয়ে চলত চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবুও না, এই ইমোশনাল মাইন্ডটা আমারে একা করে দিত। সবার মাঝে থেকেও একা এবং যার ফলশ্রুতিতে নিজের ভিতর চলত নিজেরই সাথে ভাঙচুর। কেউ বুঝে ফেলত, কেউ বুঝেও ঠাট্টা করত। কেউবা সান্ত্বনা।
এখন চাকরি করি, মার্কেটিংয়ে। প্রতিদিন মাথাভর্তি দুঃশ্চিন্তা নিয়ে ঘরে ফিরে আমার ভীষণ বলতে ইচ্ছে করে অনেক কিছু, হাসতে ইচ্ছে করে। বেতন পাই, অভাব ছাড়ে না। বেতন পাই, শুন্য পকেট। বেতন পাই মা-বাবার দুঃখ গোছায় না। বেতন পাই ঘুরতে যেতে পারি না। এখন আমি ভালো, কমপ্লিট মানুষ। বিয়ে করেছি বোউ আছে, আছে বাচ্চা, সব আছে। শুধু মুখের জবান হারিয়ে গেছে।
মৃত্যুতে মুক্তি, এমন ভাবনার জাল ঘিরে ধরে থাকে, আমার শুধু ভালো লাগে যে, বেঁচে থাকা নামক মার্বেল শুধু কোথায় যেন গড়িয়ে যায়!

মঙ্গলবার, ৯.১১.২১
আমেরিকান স্পেশালাইড হাসপাতাল
মাইজদি, নোয়াখালী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন